আ: রশিদ তালুকদার: টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ‘সামাজিক দূরত্ব’ ঢিলে ঢালাভাবে পালন করা হচ্ছে।

হাটবারে অবাধে লোক সমাগম হচ্ছে, পাড়া-মহল্লার দোকানগুলো প্রায়শই খোলা থাকছে, বিকালে শিশুরা মাঠে খেলাধূলা করছে, বাসস্ট্যাণ্ডে দোকানপাট-যাত্রী সাধারণের ভির লেগেই আছে, অভ্যন্তরীণ যানবাহন চলাচল করছে। এক কথায় সরকারি নির্দেশনা প্রায় ভুলুণ্ঠিত হচ্ছে। রোববার(২৯ মার্চ) সরেজমিনে এসব তথ্য জানাগেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, কালিহাতী উপজেলায় সরকারি তালিকা অনুযায়ী ২০টি হাট-বাজার রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় প্রয়োজনে এলাকাবাসী হাট-বাজার বসিয়েছে। রোববার কালিহাতী উপজেলা সদরের মুন্সীপাড়া, দশকিয়া ইউনিয়নের মগড়া, নারান্দিয়া ইউনিয়নের সয়া, নাগবাড়ী ইউনিয়নের রতনগঞ্জ, বাংড়া ইউনিয়নের বিলপালিমা ও পাইকড়া ইউনিয়নের হাসড়ায় হাটবার ছিল। এরমধ্যে মগড়া, সয়া ও রতনগঞ্জ সরকারি তালিকাভুক্ত হাট-বাজার।
মগড়ায় হাটবার থাকলেও দশকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ভূঁইয়ার নির্দেশে হাট বন্ধ করে দেয়া হয়। তাই হাটবার হলেও অস্থায়ী দোকানীরা না আসায় হাট জমেনি। সয়া হাটে সরকারি নির্দেশনার কোন প্রভাবই লক্ষ করা যায়নি। বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা পণ্যের দোকানীরা এসে পসরা সাজিয়েছেন, ক্রেতারা যথারীতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বাড়ি ফিরছেন। সবজি বিক্রেতা রমিজ উদ্দিন, আসান আলী, ময়জুর সহ অনেকেই জানান, কাঁচা মরিচ, ঢেড়শ, পটল, পাটশাক, লালশাক সহ অনেক ষবজিই ক্ষেতে বড় হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে তাই হাটে বিক্রি করতে এনেছেন। ক্রেতা রওশন, মারফুল, নিমাই চন্দ্র মন্ডল সহ অনেকেই জানান, সয়া এলাকার মধ্যে বড় হাট। তাদের বাড়ি আশপাশের গ্রামে দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে তারা হাটে এসেছেন। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সরকারের নির্দেশনা তারাও পালন করছেন। রতনগঞ্জ হাটের অবস্থাও তথৈবচ। তবে রতনগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লাট মিয়া দাবি করেন, দুপুরে সেনা বাহিনীর একটি দল টহল দেয়ায় হাট বন্ধ ছিল। বিকালে হাটুরেরা এসে অল্প সময়ের জন্য বিকিকিনি করে। এছাড়া স্থানীয় উদ্যোগে বসানো বিলপালিমা দুপুরের মধ্যেই হাট শেষ হয়ে যায়। হাসড়া হাটটি বিকালে বসে এবং সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়ে যায়। কালিহাতী উপজেলা সদরের মুন্সীপাড়া হাটে যথারীতি বিকিকিনি চলছে। বাঁশ, লাকড়ী, শাকসবজী সহ নানা পণ্য বেঁচাকেনা হচ্ছে। কেউ সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি আমলে নিচ্ছেনা।
অন্যদিকে, কালিহাতী উপজেলার মগড়া বাজার মোড়, এলেঙ্গা বাজার, কলেজ মোড়, বাসস্ট্যান্ড, ফুলতলা, পালিমা, নারান্দিয়া, বাঘুটিয়া, কালিহাতী সদরের হাসপাতাল মোড়, বগা মার্কেট, শহীদ শফি সিদ্দিকী চত্তর, বাসস্ট্যান্ড, কলেজ মোড়, চারান বাজার, কুটুরিয়া মোড়, রতনগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, বল্লা হলপাড় মোড়, সিঙ্গাইর মসজিদ মোড়, কাগুজিপাড়া মোড়, বালিয়াটা, খরশিলা মোড়, ভুক্তা বাজার সহ বিভিন্ন মোড় ও জনসমাগমের স্থানে অবাধে লোকজন গা ঘেষাঘেষি করে আড্ডা দিচ্ছে। অধিকাংশ আড্ডার আলোচনার মূল বিষয় করোনা ভাইরাস হলেও জনসচেতনতা তেম একটা পরিলক্ষিত হয়নি। কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও কারো মুখে দেখা যায়নি। বল্লা ইউনিয়নের বেহেলাবাড়ী মোড়ে দেখা গেল শিশুরা রীতিমত ক্রিকেট খেলছে- পাশে স্থানীয় কয়েকজন দর্শকও রয়েছে।
উপজেলার দুটি পৌরসভা ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় যৎসামান্য জীবানু নাশক পানি ছিটিয়ে দায়িত্ব পালন করেছে। পৌরসভা দুটির প্রায় রাস্তা-ঘাটই ময়লা-আবর্জনায় ভরা। নাগরিক সুবিধার অধিকাংশই না পেয়ে অভ্যস্ত পৌরবাসী। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তি উদ্যোগে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে নাগরিকরা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও দশকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক ভূঁইয়া জানান, তিনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার আওয়ামীলীগ নেতাদের ডেকে করোনা ভাইরাসের বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারি নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করারও অনুরোধ করেছেন। তিনি আরো জানান, এবিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন অত্যন্ত সজাগ। নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনী টহল দিচ্ছে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান জানান, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসন যথেষ্ট তৎপরতা চালাচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীরাও নানাভাবে জনসচেতনতায় প্রচার-প্রচারণা করছে। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে করোনার ভীতিটা তেমন প্রভাব ফেলেনি। কোন কোন এলাকায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অবহেলায় জনসমাগম হতে দেখা যাচ্ছে। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান।
কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা জানান, উপজেলার সকল হাট-বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দদের জনসমাগম না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি সবাইকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। সয়া হাটটি অন্যত্র শিপমেন্ট করার ভাল কোন জায়গা না থাকায় ওখানে হাট বসে থাকতে পারে-। জনসমাগম ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন সব সময়ের জন্য প্রস্তুত। উপজেলায় সামাজিক দূরত্ব লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে তিনি দাবি করেন।