আব্দুল লতিফ, ঘাটাইল প্রতিনিধি:
অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে হতাশ অভিভাবকদের আশার আলো দেখাচ্ছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের দড়ি চৈথট্ট গ্রামের রান ডেভেলপমেন্ট আব্দুল আজিজ সরকার অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। আগে যারা স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতো না, পারতো না লিখতে, চিনতো না বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা। ঠিক তারাই এখন স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে, লিখতে পারে, চেনে বর্ণমালা।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়েও তারা এখন অনেক সচেতন। অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, এদেরও আছে শিক্ষার অধিকার। উপযুক্ত শিক্ষা পেলে তারাও সমাজের জন্য কিছু করবে এমন চেতনা নিয়েই প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত এসব শিশুদের স্বেচ্ছাশ্রমে পরম স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধীদের আলোর মুখ দেখাতে ও সমাজ উন্নয়নে তাদেরকে সম্পৃক্ত করতে সাবেক মেম্বার আব্দুল আজিজ সরকার ২০০১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। যার ২৫ শতাংশ ভূমি দান করেন অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.মেহেদী হাসান রাজু।এ বিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থী ১১১ জন। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ১৫ জন। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আতাউর রহমান খানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিদ্যালয়টি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ হাঁটতে পারে, কেউ পারে না। আবার কেউ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। কারো হাত বাঁকা, কারো পা বাঁকা আবার কেউ সঠিকভাবে কথাও বলতে পারে না। এসবের পরেও আরো কয়েকজন আছে যারা মা বাবার কোলে আসা যাওয়া করে। এসব শিশুদের যাতাযাতের জন্য নিজস্ব ভ্যানও রয়েছে।
আব্দুল আজিজ সরকার অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কে.এম মেহদী হাসান রাজু বলেন, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করা অনেক কষ্টের, তবুও আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি ওদের শিক্ষার বিকাশ ঘটাতে। দিন দিন তাদের উন্নতি হচ্ছে। যারা কারো সঙ্গে মিশতো না তাদের অনেকে এখন মানুষের সঙ্গে মেশে। কথাও বলার চেষ্টা করে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা জীবনপট পাল্টে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদেরই কেবল উন্নতি হচ্ছে না। প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনবো এটাই আমাদের ব্রত। শিক্ষক প্রতিনিধি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন আমি সারা জীবন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সেবা ও পাঠদান করতে চাই। দেশের সরকার ও বৃত্তবানদের কাছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সাহায্য কামনা করছি। বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মো. মোশারফ ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী আখি বলেন স্যাররা আমাদের যতœ সহকারে ক্লাশ করান। আমরা সরকারের সকল সুবিধা পেতে চাই, আমাদের এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি খুব দ্রুত বিল্ডিং হলে আমরা খুব খুশি হবো।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আ. গণি জানান, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের অনেক উপকার হচ্ছে। আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু বিদ্যালয়টি সরকারি তেমন অনুদান পাচ্ছে না। শিক্ষকরাও বেতন ভাতা না পেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। বিদ্যালয়টি দ্রুত এমপিও ভুক্ত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।