ঘাটাইলে শিক্ষকতা থেকে কৃষিজীবী কেমিক্যালমুক্ত ফল চাষে সফল শিক্ষক শামছুল আলম


আব্দুল লতিফ, ঘাটাইল প্রতিনিধি:

শামসুল আলম পেশায় তিনি শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি নিজ উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেন বিষ মুক্ত বিভিন্ন জাতের ফলজ গাছ। আর তার বাগানে বর্তমানে বিষমুক্ত হরেক রকমের ৭৮টি ফলজ গাছ রয়েছে। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নে চাপড়ী গ্রামে।
স্কুল শিক্ষক শামছুল আলম কেমিক্যাল মুক্ত মিশ্র ফল চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তিনি ৭ একর জমিকে প্রায় দেশি-বিদেশি ৭৮ জাতের ফলজ গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। পেশায় শিক্ষক হলেও কৃষি কাজের প্রতি রয়েছে তার প্রবল আগ্রহ ও অদম্য চেষ্টা। তারই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পাহাড়ি মাটিতে কেমিক্যাল মুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন।
ঘাটাইল এস ই পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কৃষি বিষয়ক সহকারী শিক্ষক শামছুল আলম। কৃষি শিক্ষক হওয়ার সুবাদে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতেকলমে শিক্ষাদানের জন্য একটি ফলের বাগান করেন। এ বাগান থেকেই মনে প্রবল আগ্রহ দেখা দেয় বানিজ্যিকভাবে কেমিক্যাল মুক্ত ফল চাষ করার। পরবর্তীতে উপজেলা কৃষি কর্মকতার পরামর্শে ৭ একর জায়গার উপরে ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজ হাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন দেশি-বিদেশি ৭৮ প্রজাতির ফলদ বৃক্ষের বিশাল বাগান। আর এ বছর তিনি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক সফল হয়েছেন। বাজারেও তার ফলের চাহিদা ব্যাপক। তবে সরকারি ভাবে আরো সহযোগিতা পেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কেমিক্যাল মুক্ত ফলের বিস্তার ঘটাতে পারবেন বলে মনে করছেন সফল মিশ্র ফল চাষী শামছুল আলম। তার বাগাছে প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।তার বাগানে লাগানো ফল গাছগুলো হলোÑ আম, মাল্টা, কমলা, জাম, লিচু, কলা, কাঁঠাল, আনারস, আমলকি, জামরুল, শরিফা, আরবরই, ছফেদা, পেয়ারা, আতা, ডালিম, চালতা, কামরাঙ্গা, জলপাই, নারিকেল, পিচফল, মালবেরী, লেবু, পেঁপে, চেরীফল, কদবেল, করমচা, কাউফল, হেমফল, বাতাবী লেবু, তেঁতুল, কাঠলিচু, তাল, বেল, আমড়া, বাউকুল, বিলম্বি, কাজুবাদাম, পেস্তাবাদাম, কাঠবাদাম, মোসম্বি, ছাগল নাদা, তিতিজাম, গাব, বাংগি, লুকলুকি।


এছাড়া বিদেশী ফলের মধ্যে সৌদি খেজুর , ভিয়েতনামী ওপি নারিকেল, ড্রাগন ফল, ত্বীনফল , কালো আংগুর, আপেল, রামবুটান, নাশপাতি, এগফ্রুট (সাউথ আফ্রিকা), ডুরিয়ান (মালয়েশিয়ার জাতীয় ফল), অ্যাভোকাডো, ম্যাংগোস্টিন, কফি, মিরাক্কেল, থাই বাতাবী লেবু, চায়না কমলা, চায়না লিচু, চায়না পেয়ারা, থাই পেয়ারা, লকেট, সুদানী শরিফা, জাপটিকাবা, আলু বোখারা, পামফল, পামওয়েল, বিলেতি গাব, অ্যানোনিয়া, সাতকরা, ব্রনাই, কিং আম , ব্যানানা ম্যাংগো, কিউজাই আম (থাইল্যান্ড), অ্যামেরিকান সুন্দরি আম। বারমাসী ফলÑ
বারমাসী আম (৪ জাত), বারমাসী পেয়ারা, বারমাসী কাঠাল, বারমাসী আমড়া, বারমাসী কামরাঙ্গা, বারমাসী পেঁপে, বারমাসী কলা, বারমাসী লেবু, বারমাসী চেরীফল। মশলাÑ সাদা এলাচ, কালো এলাচ, তেজপাতা, পোলাও পাতা। ঔষধিÑ কালোমেঘ, তুলসি, আলোভেরা, শ্বতমূলি, ধূতুরা, গ্যাস্টিক গাছ। কাঠগাছÑ সেঁগুন, মেহগনি, জারুল, গামাই, লম্বু, পলাশ, দেবদারু, একাশি। শৌখিন গাছÑ পান, সুপারি, বিভিন্ন ধরনের ফুল। সবজিÑ বিভিন্ন ধরনের সবজি তার বাজানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষক শামছুল আলম বলেন, ‘ কাঠ বিড়ালী আমার বাগানের ফল খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে। এমনকি মুকুল ও ফুল ফোঁটা থেকে শুরু করে কোন কোন গাছের ফুল পর্যন্ত খেয়ে ফেলছে। বাগানের প্রধান সমস্যা হলো সেচ সমস্যা। পাহাড়ী মাটি হওয়ায় মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা কম তাই শুষ্ক মৌসুমে বেশি সেচ দিতে হয়। ৭ একর জমি সেচের আওতায় আনার মতো আর্থিক সামর্থ আমার নাই। গত বছর সেচের অভাবে বাগানে অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক গাছে পূর্বের বছর ফল ধরলেও সেচের অভাবে এ বছর ফল ধরেনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারিভাবে যদি আমি একটি সেচ প্রকল্প পাই তাহলে আমার সম্পূর্ণ ফল বাগানে বিভিন্ন ফলের বাম্পার ফলন ফলাতে সক্ষম হবো। আমি চাই আমার বাগানটি হবে জীবন্ত সংগ্রহ শালা। আমি দেশী-বিদেশী উন্নত ফলের চারা উৎপাদন করে স্বল্প মূল্যে চাষীদের মাঝে ছড়িয়ে দেব। সেপ্টেম্বর মাসের পর থেকে বাজারে দেশীয় ফলের অভাব দেখা যায়। তখন বিদেশী ফলের উপর নির্ভরশীল থাকে ফল বাজার। আমি চাচ্ছি সারা বছর দেশীয় ফল, বাজার সয়লাব করবে এবং বিদেশী ফলের উপর যেন নির্ভরশীল না হতে হয়। আমি বিদেশী ফলই দেশে চাষ করে বাজারে বিদেশী ফলের সরবরাহ বাড়াব। আমাদের যেন আর বিদেশ থেকে ফল আমদানী না করতে হয়, আমরা যেন দেশের ফলই বিদেশে রপ্তানী করতে পারি। আমার বাগানে এলাকাবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন বাগান দেখতে ও ফল কিনতে। অনেকে বাগান করার পরিকল্পনাও করতে আমার পরামর্শ চাচ্ছেন।’
ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা কয়েক জন শিক্ষক প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শামছুল আলম স্যারের কেমিক্যাল মুক্ত বিশাল ফল বাগান দেখতে যাই। তার বাগানটা খুবই আকর্ষনীয় ও ব্যতিক্রম ধর্মী। তাঁর বাগানের নিরাপদ ফল তৃপ্তি সহকারে খাই। ঘাটাইলে তাঁর কেমিক্যাল মুক্ত ফলের যথেষ্ট চাহিদা আছে।’
১০ম শ্রেণীর ছাত্রী লাবনী সাহা বলে, আমরা অনেকই শামছুল আলম স্যারের আমন্ত্রনে স্যারের কেমিক্যালমুক্ত ফল বাগানে কৃষি শিক্ষা সফরে যাই। আমাদের সাথে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন। স্যারের বিশাল ফল বাগান দেখে মুগ্ধ হই। স্যার আমাদের হাতে কলমে শিক্ষা দেয়, ফল গাছ লাগাতে কিভাবে গর্ত করতে হয়, কিভাবে মাটিতে জৈব সার ও রাসায়নিক সার মিশ্রিত করে গর্ত ভড়াট করে গাছের চারা রোপন করতে হয়।
১০ম শ্রেণীর আরেক ছাত্রী ফাতেমা আক্তার বলে, ‘স্যারের বাগানের হরেক রকমের ফল গাছ ও ফল দেখে আমরা অনেক আনন্দ উপভোগ করি। স্যারের বাগানের কেমিক্যাল মুক্ত সুস্বাদু ফল খুব মজা করে খাই।’
এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, ‘শামছুল আলম একজন মিশ্র ফলচাষী, পাশাপাশি তিনি শিক্ষক ও। তাকে আমরা নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তিনি উৎসাহি হয়ে ৭৮ প্রজাতির দেশি বিদেশী বিভিন্ন ধরনের ফল তার বাগানে চাষাবাদ করে আসছেন। তিনি নিরাপদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। আমিসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ তার বাগান পরিদর্শন করেছি। বাগানটির সেচ সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে আমরা আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে চেষ্টাকরে যাচ্ছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি যাতে এ সমস্যার সমাধান হয়।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক শামসুল আলম বিষমুক্ত ফল চাষ করে যেমন স্বাবলম্বি হচ্ছেন। তেমনি একই সাথে সাধারণ জনগণের মধ্যে বিষমুক্ত ফল উপহার দিচ্ছেন। তার ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।

পরিচিতি ইব্রাহীম ভূইয়া

এটাও চেক করতে পারেন

ভূঞাপুরের পেপার বিক্রতা সামছ আলম আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর আলেয়া পেপার হাউজের মালিক ( পত্রিকা বিক্রেতা) সামছুল আলম আর …

Leave a Reply

Your email address will not be published.