মোঃ আব্দুর রহীম মিঞা, ঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফদলা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সামাউন কবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই । তার কাছে সব অনিয়মই যেন নিয়মের পরিনত হয়েছে।

ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধন ও নাম-বয়স সংশোধনী সনদ প্রদানে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে বেশি অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সচিবের এ বাণিজ্যে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে শিশুর জন্ম থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সরকারি নিয়মানুয়ী জন্ম নিবন্ধনের কোনো ফি নেওয়া হয় না। তবে শিশুর ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা ও ৫ বছরের উপরে সব বয়সীদের ৫০ টাকা ফি নেওয়ার নিয়ম করে দিয়েছে সরকার। তবে সরকারের এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উপজেলার ৩নং ফলদা ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সামাউন কবির সরকারি বেঁধে দেওয়া টাকার জায়গায় নিজেই নতুন নিয়ম করেছেন। সে নিয়মে প্রতি জন্ম সনদে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ও জন্ম নিবন্ধনে নাম ভুল হলে সংশোধন বাবদ ৫০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত ফি আদায় করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের।
জন্ম-নিবন্ধন নিতে আসা কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধন আনতে গেলে নানা কাগজপত্রের ভুল ধরেন এবং তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন।
এ বিষেয়ে ধুবলিয়ার মোঃ রমিজুল ইসলাম খান ( পিতা মৃত লাল মামুদ খান ) অভিযোগ করে বলেন জন্ম নিবন্ধ করতে সচিব ৫ শত টাকা নিয়েছে , কিন্ত আমার ভুল জন্ম নিবন্ধন করে দিয়েছে। তার মত নানা রকম অভিযোগ আনেন আসমা খাতুন ( স্বামী কামাল হোসেন) গ্রাম মমিনপুর, জনতা খাতুন ( স্বামী জহুরূল হক) ফলদা পূর্বপাড়া, মোমিনপুর এলাকার ছায়েদ আলী।
গ্রাম পুলিশ মোঃ ছায়েদ আলী জানানা টাকা না দিলেই কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন উপজেলায় যোগাযোগ করেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদে এ অভিযোগ নতুন নয়। সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে ইউপি সচিব সামাউন কবির জন্ম নিবন্ধন সনদে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তবে জন্ম নিবন্ধন মানেই ভোগান্তি। এটা দেখারও কেউ নেই বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় সরকারের প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ স্তরের একটি স্তর ইউনিয়ন পরিষদ। এই ইউনিয়ন পরিষদের সকল স্তরের নাগরিককে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রায়ই যেতে হয় চেয়ারম্যান-সচিবের কাছে। শিশু জন্ম মৃতুুর নিবন্ধন থেকে শুরু করে গ্রাম্য বিবাদ সালিশিসহ প্রায় সকল কাজগুলো সারতে যেতে হয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সচিবদের কাছে। এমনিতেই সরকারী – বেসরকারী কাজে জনসাধারণকে বিভিন্ন রকম সমস্যা সমুক্ষিন হতে হয় অহর্ণিশ । নানা অজুহাতে ধারে ধারে ঘুরতে হয় দিনে পর দিন। এতসব সমস্যার মধ্যেও ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব দীর্ঘ দিন যাবত ছুটিতে বলে জানান এলাকার ভোক্তভোগিরা। এমনিতেই সরকারী ছুটি সপ্তাহে দুদিন থাকায় ভোক্তভোগী জন সাধারনের দুঃখের সীমা-পরিসীমা নেই । তার মধ্যে সচিব দীর্ঘ দিন অফিসে না আসায় চরম ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে সাধারণ জনগন।
এ বিষয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় রবিবার (৮ মে ) সচিব মোঃ সামাউন কবির অফিসে উপস্থিত নাই । জানা যায় তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকায় তিনি গত ২৬ এপ্রিলের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে আসেন না।
ইউনিয়ন পরিষদের উদ্দোক্তা আব্দুল খালেক বলেন সচিব দীর্ঘ দিন না আসায় চরম ভোগাত্তির শিকার হচ্ছে মানুষ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন টাকা ছাড়া কোন কাজ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন অনলাইন ব্যতীত ৬-৭ শত জনের ভূয়া জন্ম নিবন্ধন কাজ করে গেছেন সচিব সামা্উন।
ফলদা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল খান বলেন তিনি নিজে তো আসেন না, যাও সপ্তাহে এক দিন আসেন জন্ম নিবন্ধ ফি নেন ২০০ টাকা। আবার মৃত্যু সনদ- জন্ম সনদ- জন্ম নিবন্ধ মিলে নেন ৪০০ টাকা। তার পর ঘুরতে হয় দিনের দিনের দিন। এই হলো ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের অবস্থা।
সচিব মোঃ সামাউন কবির নিয়মিত অফিসের না আসার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তার দুর্নীতির সহযোগিতা না করায় চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম তালুকদার পরিষদের মেম্বার ও এলাকার সন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করায় আমার নিরাপত্তার কারনে আমি অফিসে যাওয়া বন্ধ করেছি। আর আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট বিষয়টি অবগত করে ছুটিতে আছি।
ফলদা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুল ইসলাম তালুকদার দুদু জানান সচিবে সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই। পরিষদে কাজ করতে আসা জনগনের সঙ্গে তার দূর্ব্যবহার, ভূয়া জন্ম নিবন্ধ, সরকারী নির্ধারিত ফির চাইতে অরিরিক্ত ফি আদার করাসহ নানা অভিয়োগ রয়ছে সচিবের বিরোদ্ধে । সচিব দীর্ঘ দিন অফিসে আসেন না জানাতে চাইলে তিনি বলেন প্রতিনিয়ত সচিব ছাড়াই কাজ সারতে হচ্ছে আমাকে। নিয়মিত সচিব অফিস না আসায় এলাকার জনগন চরম ভোগাক্তি স্বীকার হচ্ছে । কাজও সঠিক সময়ে শেষ করা যায় না। কেন আসে না তা আমার জানা নেই। তাকে মারধরের বিষয়ে আমাকে কিছু জানায় না। তবে বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। আমি তার বিষয়ে পরিষদের মেম্বারদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহীর অফিসারে কথা বলে তাকে অবগত করেছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ ইশরাত জাহান বলেন, সচিবের উপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। সচিব বর্তমানে ছুটিতে আছে জেনেছি।