নিজস্ব প্রতিবেদক : নদী ভাঙ্গা বিস্তীর্ণ যমুনা চরাঞ্চচল, চারদিকে ধূ-ধূ বালু চর। দু’মাস আগে এ চরাঞ্চচলে চিত্র ছিল সবুজ আর সবুজে ঘেরা প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে । বর্তমানে জমি থেকে ভূট্টা ওঠানো চলছে।ভূট্টা মাড়াই করে ঘরে তুলতে ব্যস্ত এখন চরাঞ্চলের কৃষকরা।এদের সাথে সহযোগিতা করছে গ্রামীণ নারীরাও। তবে বেশীর ভাগই মেশিনে ভূট্টা মাড়াই করা হয়। ভূট্টা চাষিরা বলছে যমুনায় এ বছর ভূট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে বড় দু’চিন্তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে। কেননা দুর্যোগের কারণে ভূট্টা রোদে শুকানো নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষিরা।তবে ঘূর্ণিঝড় ফণির কারনে দূ-তিন কিছুটা সমস্যা হলেও এখন স্বস্তি পেয়েছে ভুট্রা চাষিরা। শুধু ভূট্টাই নয় রয়েছে চিনাবাদাম, খেসারি কালাই, মসুরি ডাউল, মিষ্টি কুমড়া, নদীর নিচু জমিতে বোরো ধান চাষ, মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন ধরণের রবি ফসল।কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবারের মত এবারো টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর অংশে গাবসারা চরাঞ্চলে ভূট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। গতবারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্থবছর ২০১৮-১৯ সালে ১হাজার ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষ করা হয়েছে।এছাড়াও উপজেলার চরাঞ্চলের গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়ন বাদেও ৪ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় আংশিক কিছু এলাকায় ভূট্টার চাষাবাদ করা হয়েছে। এতেও ভালো ফলন হয়েছে।সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা নদীর অংশে উপজেলার চরাঞ্চলে জেগে ওঠা চরের অধিকাংশ জমিতে ভূট্টা লাগানো হয়েছিল। ভূট্টাগুলো গাছ থেকে উঠিয়ে দরিদ্র নারীরা দিন মজুরি হিসেবে কাজ করছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও আনন্দে কাজ করছে। কড়া রোদকে উপেক্ষা করে তাদের বর্তমান সময়ের প্রধান অর্থকরি ফসল ঘরে তুলছে। কেউ ভূট্টা রোদে শুকানোর কাজ করছে। কেউ গাছ থেকে ভূট্টার ছড়াগুলো মেশিনের সাহায্যে ছাড়াচ্ছে।গাবসার ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের ভূট্টা চাষি মো. আব্দুল আলিম বলেন- গতবারের ভূট্টা চাষে অনেকেই লাভবান হয়েছে। তাই তাদের দেখে ও পরামর্শে প্রথমবারের মত ১ বিঘা জমিতে ভূট্টা চাষ করেছি। তার কাছে খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন- অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভূট্টা চাষে খুবই খরচ কম হয়েছে। সার, পানি সেচ, শ্রমিক খরচ ও বীজ কেনা বাবদ এ পর্যন্ত ৫ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। যা ধান চাষের তুলনায় প্রায় অর্ধেক খরচ। ১ বিঘা জমিতে তার লক্ষ্যমাত্রা ৩২-৩৬ মণ ভূট্টা হয় । কম খরচে ও কম কীটনাশক ব্যবহার করে অধিক ফলন হয়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভূট্টা চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। ভূট্টা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহে উপজেলার গোবিন্দাসীতে দু’দিন হাট বসে। রবিবার ও বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে এ হাট শুরু হয়। ঘোড়ার গাড়ি ও ট্রাক্টরে পরিবহন করে শত শত মণ ভূট্টা হাটে নিয়ে দ্রুত সময়ে পাইকারি বিক্রি করা যায়।চন্ডিপুর গ্রামের চাষি আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন,“ ভূট্টা চাষ করে কয়েক বছরে অনেক লাভ হয়েছে। আশা করছি গতবারের চেয়ে এবার দেড়গুণ লাভ হবে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ভূট্টা গাছে ছড়াও বেশী ধরেছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে কোনো ধরণের সহযোগিতা বা পরামর্শ পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষক লতিফ মিয়া বলেন-কৃষি অফিসের সহযোগিতায় কয়েক বিঘা জমিতে ভূটা চাষ করেছি। তারা বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে সরকার যদি ভূট্টার দাম নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে আরো বেশী লাভবান হওয়া যেত”। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, ১ বিঘা জমিতে চরঞ্চলে ধান চাষ করলে ১২ থেকে ১৫ মণ ধান হয় অপর দিকে ১ বিঘা জমিতে ভূট্টা হয় ৩০ থেকে ৩৫ মণ। দামেও তেমন পার্থক্য নেই। ১ মণ ধানের দাম ৬শ থেকে ৮শ টাকা। ভূট্টা চাষে কীটনাশক ও সারের ব্যবহারও সীমিত। অন্যান্য রবি শস্যের চেয়েও ভূট্টার ফলন বেশি। তাছাড়া সহজে আবাদযোগ্য এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় ভূট্টা চাষে কৃষকরা বেশি আগ্রহী। তাছাড়া ভূট্রা দিয়ে ব্রয়লার, ও মাছের ফিড হিসেবে ব্যবহার করছে। গাবসারা গ্রামের সাহেদ আলী জানান, বিঘাতে ভূট্টার ফলন ৩৫ মণ ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে ভূট্টা চাষের জন্য কৃষি অফিস থেকে সময়মত সার-বীজ ও কীটনাশক পেয়েছি।ভূট্টা পাইকারি ক্রেতা শুকুর আলী জানান, শুরুতে যখন ভূট্টা কেনা হয় তখন ৭’শ থেকে ৭’শ ৫০ টাকা মণ ছিল। এরপর ধীরে ধীরে যখন হাটে ভূট্টা বেশী আমদানী হতে শুরু করল, তখন ভূট্টার দামও কমতে শুরু করল। বর্তমানে ভূট্টার দাম ৬শ’ থেকে ৭ টাকা মণ। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জিয়াউর রহমান বলেন- উপজেলার যমুনা চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্য ফসলের চেয়ে ভূট্টাকে এখন একমাত্র ও প্রধান অর্থকরি ফসল হিসেবে বেছে নিয়েছে। ভূট্টা চাষ অধিক লাভজনক একটি ফসল। প্রান্তিক ও দরিদ্র কৃষকদের কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সব ধরণের সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছি। আমাদের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে কৃষকদেরকে সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়েছেন।
