ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি, তীব্র ভাঙনে হুমকির মূখে প্রাথমিক বিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ অসময়ে অস্বাভাবিকভাবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । নদীতে বইছে প্রবল স্রোত ভাঙ্গছে যমুনা নদীর দুই কুল। নদীর গর্ভে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ী , স্কুল, মাদ্রাসা । দিশেহারা ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার । তলিয়ে গেছে ভূট্রা,বাদাম, কার্তিক কলাই, মরিচ টাল, মুলা, শাক সবজীসহ অন্যান্য সদ্য বীজ তলা ফসলী জমি।ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে চরাঞ্চলের কৃষকরা।
গত কয়েকদিনে উজান থেকে নেমে আসা যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এই পানি বৃদ্ধির কারণে উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের চরশুশুয়া, রামাইল, বাসুদেবকোল গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনার পূর্ব পাড়ের চিতুলিয়া পাড়া, খানুরবাড়ী, গাবসারা ইউনিয়নের জুংগীপুর, রুলীপাড়া,কালিপুর,ভদ্রশিমুল,রেহাই গাবসারা, নিকলা পাড়া এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। অর্জুনা ইউনিয়নের,শুশুয়া,বোরার বয়ড়া,রামাইলও দেখা দিয়েছে একই রকম নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে কয়েক দিনের ভাঙনে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক বসতভিটা। বাসুদেবকোল ফকির মঈন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও ভদ্র শিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনার তীব্র ভাঙনে হুমকির মধ্যে রয়েছে।এদিকে চলতি বছরে বন্যায় প্রথম ধাপে বেশ কয়েকটি বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। সে সময় নিজেদের বসতভিটা রক্ষার জন্য নিজ উদ্যোগে প্লাস্টিকের বস্তা ফেলেছে স্থানীয়রা। পানি কমে গেলে নদীর ভাঙন কিছুটা কমে আসে। সে সময় তারা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার দাবি জানান কিন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে এলাকাগুলোতে। এদিকে কার্তিক মাসে ( অক্টোবর মাঝামাঝি) এ অসময়ে ৫ দফার নতুন করে বন্যায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন ও তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার কৃষকরা।হুমকির মূখে পড়েছে বসতবাড়ীসহ কয়েকটি মসজিদ , স্কুল, মাদ্রাসা ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের বাসুদেবকোল,এলাকা অংশে ব্যপকভাবে যমুনা ভাঙনের কবলে পড়ে অর্ধশত বসতবাড়ী, ৭ টি মসজিদ,১ কওমী মাদ্রাসা, ২ টি বাজার নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । হুমকীর মুখে রয়েছে বাসুদেবকোল ফকির মঈন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, বাসুদেবকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মোঃ ছাকমান বলেন, এবছর বর্ষা মৌসুমে আমার বসতবাড়ী কোন ক্ষতি না হলেও এই অসময়ে বন্যায় আমার বসতবাড়ী সম্পন্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাড়ী-ঘর অন্য জায়গায় সরানো এ সময় খুব কঠিন কাজ। তারপরেও আর্থীক অনটনের মধ্যে কোনোমতে ঘরগুলো ভেঙ্গে নিয়ে অন্যের জায়গার রেখেছি। বাসুদেবকুল এলাকার চান মিয়া বলেন,অসময়ের বন্যার আমার জমির ফসল শেষ করে গেল। এলাকার ঘর-বাড়ী যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেল, এখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় থাকবে । এদের মতো যমুনার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে একই এলাকার বাবলু, শুকুর আলী,আলী আকবরসহ আরো অনেকেই বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের অভিযোগ প্রশাসন যদি নদী ভাঙ্গন এলাকায় ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত তাহলে আমাদের এত বড় ক্ষতি হতো না। বাসুদেবকোল ইসলামিয়া দারুল সুন্নাহ কওমি মাদ্রাসার মোহতামিম জাকেরুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসায় প্রায় ৩ শত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। মাদ্রাসাটি নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেল। মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের পড়া লেখার চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল তারা। প্রতিষ্ঠানটি পূনরায় স্থানানন্তরের নিজস্ব জায়গা না থানায় হতাশার মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি। অর্জুনা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (৮ নং ওয়ার্ড ) মোঃ দোলোয়ার হোসেন দিলসাদ জানান এ অসময়ের বন্যার এলাকায় ব্যপক ক্ষতির সম্মুখিত হয়েছে আমার ৮ নং ওয়ার্ডের জনগন। এ এলাকায় ২টি ব্রিজ ১০/১২ টি পরিবারের ঘর-বাড়ী,৭টি মসজিদ, ১ টি কওমি মাদ্রাসা সম্পূর্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়েন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়টি হুমকির মূখে রয়েছে।
গাবসারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শাহআলম শাপলা জানান, তার এলকায় এ সময় ব্যপক নদী ভাঙন হচ্ছে । থেমে নেই নদী ভাঙন,প্রতিদিন কোন না কোন বাড়ী নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে । বর্ষা মৌসুমে ৯৪ পরিবার আর এ সময় ৩০টি পরিবারের ঘর-বাড়ী সম্পূন্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভূট্রা,বাদাম, কার্তিক কলাই, মরিচ টাল, মুলা, শাক সবজীসহ,২ হাজার একর জমির রবিশস্য বিনষ্ট হয়েছে।তিনি আরো জানান প্রশাসনের কাছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দেওয়া হয়েছে কিন্তু এখনও আর্থিক কোন সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
অর্জুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ দিদারুল আলম মাহবুব জানান, তার এলকায় এ সময় নদী ভাঙনে ও ফসলের ব্যপক ক্ষতি হওয়ায় চর এলাকার মানুষ দিশে হারা । থেমে নেই নদী ভাঙন,প্রতিদিনই নতুন কওে ঘর-বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে । বর্ষা মৌসুমে ৩ শত পরিবার আর এ সময় অর্ধশত পরিবারের ঘর-বাড়ী সম্পূন্ন নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক হাজার একর ফসলী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে গেছে। তিনি দ্রæত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ চর এলাকার মানুষের আর্থীক সহযোগীতার জন্য প্রধান মন্ত্রীর কাছে দাবী জানান ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোডের্র (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সারা বিশ্বে পড়েছে। যার কারণে সময় -অসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে দেশ।তবে আমরা টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে অর্জুনা ও গাবসারা ইউনিয়নের চর এলাকায় পরিদর্শন করে পদক্ষেপ নিব।
আপনার মতামত লিখুন