ভূঞাপুর ১৬ বছর পর আজ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন!

লোকাল নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘ ১৬ বছর পর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন। আজ ১ লা নভেম্বর শুক্রবার সম্মেলনের দিন নির্ধারন করা হয়েছে। আর এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঝিমিয়ে পড়া ও অভ্যন্তরীন কোন্দলে দ্বিধা বিভক্ত স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে অনেকটা প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে চলছে প্রস্তুতি সভা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফেসবুক, প্যানা, ব্যানার, পোস্টার লাগিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছে। সম্মেলনে যারা ভোটার তাদের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ১০ দিন যাবৎ নেতা কর্মীদের চাঙ্গা করতে চলছে মাইকে প্রচার প্রচারনা। বের করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে খন্ড খন্ড মিছিল ও মটর সাইকেল শোভাযাত্রা। চায়ের দোকান গুলোতে চলছে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।

সম্মেলনকে সামনে রেখে ভূঞাপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নির্মান করা হচ্ছে বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেল। গঠন করা হয়েছে ১০ টি উপ কমিটি। ৩৭ টি স্থানে অতিথিদের স্বাগত ও সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে নির্মান করা হচ্ছে তোরণ। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি ও প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহমানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ ত্রি বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন মাসুদুল হক মাসুদ আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুত। গঠন করা হয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি। দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আসাদুজ্জামানের সাথে নতুন কমিটির দুরত্ব দেখা দেয়। নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ দুবছর না যেতেই ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে তা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রকাশ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ। ২০০৬ সালের জুন মাসে আব্দুল হালিম এডভোকেটকে আহবায়ক ও আমিরুল ইসলাম তালুকদারকে যুগ্ম আহবায়ক করে আহবায়ক কমিটি গঠন করে জেলা আওয়ামীলীগ। আর এ আহবায়ক কমিটি প্রায় আড়াই বছর দায়িত্ব পালন করে। ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে জেলা কমিটি আগের আহবায়ক কমিটি বাদ দিয়ে মাসুদুল হক মাসুদকে আহবায়ক ও আব্দুর রাজ্জাক মিঞাকে যুগ্ম আহবায়ক করে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করে। জেলা আওয়ামীলীগ সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি না করে দীর্ঘ ৭ বছর তাদের সুবিধামত কখনো ২০০৬ সালের আহবায়ক কমিটি আবার কখনো ২০০৯ সালের আহবায়ক কমিটি দিয়ে দলীয় দায়িত্ব পালন করান। মুলত এ সময় নাম মাত্র আহবায়ক কমিটি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালে আগস্ট মাসে জেলা কমিটি মাসুদুল হক মাসুদকে আহবায়ক ও আমিরুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুতকে যুগ্ম আহবায়ক করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন।কিন্তু নানা জটিলতায় এ কমিটি সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ৬৭ সদদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর এ কমিটিকে ৬ মাসের মধ্যে সম্মেলন করতে বলা হয়। কিন্তু এ কমিটি ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল সম্মেলনের তারিখ নির্ধারন করে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। একটি অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এ সম্মেলনও ভেস্তে যায়। বার বার দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের অযাচিত হস্তক্ষেপে সম্মেলন না হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন আহবায়ক কমিটি থাকায় দলের ভিতর যেমন কোন্দল বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি সাধারণ কর্মীরাও ঝিমিয়ে পড়েছে। আসন্ন সম্মেলনকে ঘিরে নেতা কর্মীরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে প্রাণ ফিরে এসেছে।
আজকের এই সম্মেলনে সভাপতি পদে একমাত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ও পৌর মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে ৪ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছে। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হামিদ ভোলা, যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাহিনুল ইসলাম তরফদার বাদল ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এডভোকেট আনোয়ার হোসেন মিন্টু ।
গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন,‘দলের সম্মেলন হলেই কেবল কর্মীদের মূল্যায়ন হয়। আশা করি এ সম্মেলনের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসবে। তারা দলকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।’
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম এডভোকেট বলেন,‘নেতা কর্মীদের সক্রীয় রাখতে নিয়মিত সম্মেলনের বিকল্প নেই। দীর্ঘ দিন সম্মেলন না হওয়ায় তারা ঝিমিয়ে পড়েছে। আশা করি এ সম্মেলন তাদের উজ্জীবিত করবে। সম্মেলন সফল হোক স্বার্থক হোক।’
টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনির বলেন,‘ভূঞাপুরে ১৬ বছর পর আওয়ামীলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় দলের মধ্যে চরম কোন্দল ছিল। সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থবির ছিল । মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমার নির্বাচনী এলাকা ভূঞাপুর-গোপালপুরে দলের নেতা কর্মীদের সুসংগঠিত করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি নতুন নেতৃতের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। কর্মীরাও মূল্যায়িত হবে।’

পরিচিতি Ibrahim Bhuiyan

এটাও চেক করতে পারেন

ভূঞাপুরে দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে দায়িত্বশীলদের দৈনিক দেশ রুপান্তর পত্রিকার চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন ও পঞ্চম বর্ষে …

Leave a Reply

Your email address will not be published.