নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে শিশুদের বিনোদনের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত লেখক ও সাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর পৈতিক ভুমিতে তার সুযোগ্য কন্যা খালেদা হাবীব খান প্রতিষ্ঠা করেন আসাদুজ্জামান খান নামে একটি শিশু পার্ক।
প্রতিষ্ঠার পর শিশু পার্কের চারিদিকে নিরাপত্তা বেষ্টুনি থাকলেও প্রভাবশালী মহল বেষ্টুনি ভেঙ্গে শিশু পার্কের জায়গা দখল করে ব্যবহার করছেন নানা কাজে। বছরের পর বছ শিশুদের বিনোদনের পরিবেশ নষ্ট করে যাচ্ছে প্রভাবশালি মহল। পার্কটি এক দিকের বেষ্টুনি ভেঙ্গে গত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি বহুতল ভবন নির্মান কাজে ব্যবহারে জন্য ইট,বালি,রড দিয়ে দখলে রেখে ছিলেন । অপর দিকে পাশ্ববর্তী আসাদুজ্জামান খান হাফিজিয়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও পাশে মালিকাধীন বহুতল ভবন নির্মানের কাজে দখলে রাখে বছরের পর বছর। এতে পার্কে শিশুদের বিনোদন বন্ধ হয়ে কমলমতি শিশু কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথ ব্যাহত হয় চরমভাবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু পার্কের ভিতরে হোটেল মালিকদের লাকড়ী ও চুলার ছাই স্তুুপ করে রাখতে। শিশু পার্কে প্রবেশ মুখে হোটেল মালিক দখল করে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করছে। এদিকে সকাল-সন্ধ্যা ফোসকা, বাদাম, ঝালমুড়ি বিক্রেতারা ভ্যান নিয়ে শিুশু পার্কে ভিতর দাড়িয়ে বিক্রি করছে খাদ্য সামগ্রী। এতে করে শিশুদের খেলা ধূলার যেমন বেঘাত ঘটছে তেমনি নষ্ঠ হচ্ছে পরিবেশ। পার্কে শিশুদের বিনোদনের জন্য হাতে গোনা যে কয়টি রাইড ছিল, খেলাধূলার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় সেগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে । কমলমতি শিশুরা না বুঝে ভাঙ্গাচূড়া মরিচা ধরা রাইডে খেলাধূলা করতে গিয়ে কেহ কেহ আহত হচ্ছে, আবার কারো কারো গায়ের পোশাক ছিঁড়ে যাচ্ছে নিজেদের অজান্তেই।
শিশু পার্কটির পাশেই গড়ে উঠেছে মালিকাধীন পাঁচ-ছয় তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন, ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ, ভূঞাপুর সরকারি পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয় , মালিকাধীন ডায়েবেটিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির বহুতল ভবন, হোটেল, ও কিন্ডারগার্টেন। জনবহুল স্থানে পার্কটি প্রতিষ্ঠা হওয়ায় এবং দেখভাল বা নজরদারি না থাকায় একমাত্র শিশুপার্কটি যার যার মতো দখল করে ব্যবহার করছে। ভূঞাপুর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি পার্কের দক্ষিণ পাশের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে সমিতির বহুতল ভবন একিভূত করে রেখেছেন শিশু পার্কটি। সমিতির ভবনটি নিচে অংশ ভাড়া দিয়েছেন হোটেল পরিচালনার কাজে। উপরের তিন তলা চার তলা সাঁকো কিন্ডার গার্টেন। পাশেই রয়েছে আসাদুজ্জামা খান হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও আমিনুল ইসলাম কিন্ডার গার্টেন। প্রতিদিন সাকো কিন্ডার গার্টেনের কমলমতি শিশুদের এ্যাসেম্বেলি করানো হচ্ছে পার্কে। এ সময় হোটেলে কালো ধোঁয়ার স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়েই চলছে এ্যাসেম্বেলি। শিশু পার্কটির পাশেই গড়ে উঠেছে মালিকাধীন পাঁচ-ছয় তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন, ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজ, ভূঞাপুর সরকারি পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয় , মালিকাধীন ডায়েবেটিক হাসপাতাল ও ক্লিনিক, হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্টেন । এ সকল শিশুদের সকলেরই বয়স পাঁচ থেকে আট বছেরর মধ্যে। এ বয়সের শিশুদের নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যঝুকি এই শিশুপার্কে অপেক্ষিত। যার ফলে শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনে অসুখের শঙ্কা রয়েছে। এর ফলে শিশুদের প্রায় সার্বক্ষণিক বাসার চার দেয়ালে বন্দি অবস্থায় কাটাতে বাধ্য করছে পরিবারে বাবা-মা। এতে তারা জড়িয়ে পড়েছে মোবাইল গেমসে, হচ্ছে মোবাইলে আসক্তি। লেখা-পড়ায় ফাকি দেওয়ার চেষ্টা করছে কারণ-অকারণে। সন্ধ্যার পর এর আশপাশে রাস্তাগুলো কিশোর গ্যাংগদের ভয়ে মহিলা ও সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত হযে পড়ে। কিন্ডার গার্টেন ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিশু কিশোর অভিভাবকরা জানান, বাচ্চারা শিশু পার্কে এসেই রাইডগুলোতে চড়ে খেলতে না পেরে সহপাটিদের সাথে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে। দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে ইট খোয়া,লাকড়ী সাথে হোচট খেয়ে গুরুতর আহত হচ্ছে অনেক শিশু। আমরা চাই এই শিশু পার্কটি দখলমুক্ত করে চারিদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করে বিনোদনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হউক। শিশু পার্কটি দ্্রূত সংস্কার করে শিশুকিশোরদের উপযুক্ত বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়।
ভূঞাপুর শিশুপার্কের পরিবেশের বাস্তবতা স্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহুরুল বলেন যেহেতু এখানে কিন্ডার গার্টেনের ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে তারা সকাল বেলা এ্যাসেম্বেলি করছে সেখানে হোটেল রাখা ঠিক নয়। আমরা চেষ্টা করছি হোটেলটি যাতে অতিদ্রুত অনত্র সরিয়ে নেয়। মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাফর ইকবাল শাহিন বলেন মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সামনে যে খালি যায়গা রয়েছে তা সকলে যে ভাবে ব্যবহার করছে আমরাও সেভাবে ব্যবহার করছি। আমাদের ভবন আমরা ভাড়া দিয়েছিলাম সেখানে হোটেল ব্যবসা করবে আমাদের জানা ছিল না। আমরা তাদেরকে হোটেল পরিচালনায় অনত্র জায়গা নেওয়ার জন্য বলেছি।এব্যাপারে
ভূঞাপুর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, পার্কটি পূর্বে মেরামতের কাজ করা হয়েছিল পৌরসভা বরাদ্দ থেকে। পার্কটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। আর পৌরসভার তেমন কোন জনবল নেই যে সাবক্ষণিক তদারকি করা যাবে। পার্কটির সংস্কারের কাজে সরকারি বরাদ্দ পেলে আধুনিকায়ন করে গড়ে তোলা হবে।
কিশোর গ্যাংগদেও বিষয়ে ভূঞাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান উল্লা জানান, কিশোর গ্যাংগদের বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা দেওয়ায় আমরা সার্বক্ষনিক নজর দিচ্ছি। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানান।