আজ ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসের দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১১ আগস্ট। ঐতিহাসিক জাহাজ ধ্বংসের দিন। যা এলাকাবাসির নিকট জাহাজমারা দিবস নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালের এই দিনটি মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিপুল পরিমান গোলাবারুদ, জ্বালানী ও রসদ বোঝাই ৭টি যুদ্ধ জাহাজ নারায়ণগঞ্জ থেকে ভূঞাপুর যমুনা নদী হয়ে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিল। জাহাজগুলো টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীর ভূঞাপুরের মাটিকাটা নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করে। বিষয়টি কাদেরিয়া বাহিনীর চৌকশ কমান্ডার হাবিবুর রহমান বীরবিক্রমের নজরে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা এলাকার লোকজন নিয়ে ১০ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আক্রমণ চালায়। তারা জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এস.ইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এল.সি-৩, ও এস.টি রাজনের দখল নেন। এসময় অন্য জাহাজ গুলো সিরাজগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। দখলকৃত জাহাজদুটিতে রাখা ১ লক্ষ ২০ হাজার বাক্সে তৎকালিন ২১কোটি টাকা মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মুক্তিযোদ্ধারা লুটে নেয়। পরে ১১ আগস্ট জাহাজ দুটিতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হয়। এঘটনায় ১১আগস্ট হতে ১৪ আগস্ট পযর্ন্ত পাক বাহিনীর সাথে কাদেরিয়া বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে ৩ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় এবং আহত হয় অন্তত ২০ জন। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসের ইতিহাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীদের হাতে এত বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখিনের নজির আর কোথাও নেই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই যুদ্ধকে পট পরিবর্তনকারী (ঞঁৎহরহম চড়রহঃ) অধ্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়।পরবর্তীতে সিরাজকান্দী জাহাজমারা যুদ্ধে খোয়ানো অস্ত্র উদ্ধারের জন্য পাক বাহিনী চারদিক থেকে সিরাজকান্দী মাটিকাটাসহ ভূঞাপুরে জল, স্থল ও আকাশ পথে অভিযান পরিচালনা করে। মুক্তিবাহিনী লুট করা সেই অস্ত্র দিয়েই সাহসিকতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেন। জাহাজমারা যুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ ও খোয়া যাওয়া অস্ত্র গোলা বারুদের ঘটনা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহুল ছিল যে, হারানো অস্ত্রসম্ভার উদ্ধার ও মুক্তিযোদ্ধাদের উৎখাতের জন্য আগত পাকিস্তানী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের প্রধান লে.এ.কে নিয়াজি। তিনি ভূঞাপুর ডাকবাংলোতে অবস্থান করে অভিযান পরিচালনা করছিলেন। এই ব্যাপক তৎরপরতা সত্তে¡ও হানাদার বাহিনী তাদের খোয়া যাওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। হানাদার বাহিনীর ৪৭ ব্রিগেড এই অঞ্চল দখলের চেষ্টা করে। বিমান বাহিনীর দুটি স্যাবর জেট বোমা হামলা চালায়। কিন্তু কাদেরিয়া বাহিনীর লুট করা অস্ত্র দিয়েই হানাদার বাহিনীকে সফলভাবে প্রতিহত করে। যুদ্ধকালীন গোলাবারুদ, ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের গোলা বারুদের আঘাতে এবং পাক বাহিনীর পাল্টা হামলা ও বিমান আক্রমণে এলাকার ঘর বাড়ী ও প্রচুর সম্পদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বের কাছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। কমান্ডার হাবিবুর রহমানের অসীম সাহসীকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীরবিক্রম” উপাধিতে ভূষিত করেন।জাহাজ ধ্বংসের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে সিরাজকান্দি নামক স্থানে প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। দিবসটি পালনের জন্য সরকারি ভাবে কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদ,ভূঞাপুর ১২ আগস্ট শনিবার স্থানীয় স্বাধীনতা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

পরিচিতি Ibrahim Bhuiyan

এটাও চেক করতে পারেন

ভূঞাপুরে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সংবর্ধনা ও মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের সংবর্ধনা ও মতবিনিময় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *