মামুন সরকার ভূঞাপুর প্রতিনিধিঃ টার্কি জাতের মুরগি পালন করে সাবলম্বী হয়েছেন ভূঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়নের ক্ষুদ্রনিকলা গ্রামের নূরুল ইসলাম। টার্কি খামারী নূরুল ইসলাম বর্তমানে খুব স্বাচ্ছন্দেই চালাচ্ছেন তার সংসার। কিন্তু অল্প কিছুদিন আগেও অটো রিক্সা চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে খুব কষ্টে চলত মা বাবা ভাই বোন নিয়ে তার সংসার। দরিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য ইকো এগ্রো ফার্মের সহায়তায় তিনি টার্কি চাষ শুরু করেন। আত্মপ্রত্যয়ী এই খামারী বর্তমানে অনেকটাই সাবলম্বী।
নূরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথমে ৫৫০টি টার্কি মুরগির বাচ্চা নিয়ে একটি খামার শুরু করি। বর্তমানে এখন আমার দুইটি খামারে মোট ১ হাজার ৫৫০টি টার্কি রয়েছে। মোট ছয়টি প্যাকেজে টার্কি চাষ করা হয়। আমি দ্বিতীয় প্যাকেজে অথাৎ ডিম আসার আগ পর্যন্ত ৬১ তম দিন থেকে ১২০ তম দিন (২ মাস) টার্কি চাষ করি। এতে আমার সকল খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। টার্কি চাষ লাভ জনক হওয়ায় আশেপাশের অনেক বেকার যুবক টার্কি মুরগি পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। তাছাড়া টার্কির খাবার নিয়ে মুরগির চেয়ে দুর্ভাবনা কম। এরা দানাদার খাবারের চেয়ে সবুজ শাকসবজি, কমলির শাক, বাঁধাকপি ও কচি ঘাস বেশি পছন্দ করে। এমনকি এরা ঠা-া-গরম সব সহ্য করতে পারে।
টার্কি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে ওঠার সাত মাসের মধ্যে ডিম দেয়। এক দিন বয়সী প্রতিটি টার্কির বাচ্চার দাম প্রায় ৫০০ টাকা। সাত মাসের মেয়ে টার্কির ওজন হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কেজি এবং পুরুষ টার্কির হয় প্রায় আট থেকে দশ কেজি। এক বছরে একটি টার্কির ওজন হয় ২০ কেজি। একটি টার্কি মুরগি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ টি ডিম দেয়। এক হালি ডিমের দাম প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। টার্কির মাংস সুস্বাধু ও পুষ্টিকর খাবার। ডায়বেটিক রোগীর জন্য উপযোগী খাদ্য এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রোস্ট ও কাবাব হিসেবে টার্কির মাংস খাওয়া যায়। টার্কির প্রতি কেজি মাংসের দাম প্রায় ৫০০ টাকা। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নাটোর ও কুমিল্লাসহ বেশ কিছু অঞ্চলে টার্কির চাহিদা তুলনামূলক বেশি। টার্কি বর্তমানে দেশের মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে বেশ অবদান রাখছে। এছারাও এ মাংসে প্রোটিন বেশি, চর্বি কম এবং অন্যান্য পাখির মাংসের চেয়ে বেশি পুষ্টিকর।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ শরীফ আব্দুল বাসেত বলেন, টার্কি আমাদের প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের একটি নতুন প্রজাতি। এটি একটি লাভজনক ব্যবসা এ কারণে খামারিরা এ ব্যবসায় ঝুঁকছে। তাছাড়া টার্কি মুরগির বড় ধরনের কোন রোগ-বালাই দেখা যায়না। আমরা উপজেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ থেকে সকল টার্কি খামারিদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।