নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে পবিত্র রমজান মাসেও চলছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
![](http://localnews24bd.com/wp-content/uploads/2024/04/received_390141623982027-1024x450.jpeg)
প্রাকৃতিক বৈরিতার খরতাপে এমনিতেই জনজীবনে নাভিশ্বাস তার সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং। এই দুইয়ে মিলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে গ্রাম এলাকার সাধারণ মানুষের জীবন।
প্রচন্ড তাপদাহ যত তীব্র হয়, বিদ্যুতের লোডশেডিং ততই পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। রমজান শুরু হওয়ার পর থেকেই দিনে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী লোডশেডিং দিয়ে শুরু হয় প্রথম ধাপ। সন্ধ্যার পরে দ্বিতীয় ধাপ, তারাবীহ নামাজের সময় তৃতীয় ধাপ এবং গভীর রাত থেকে শুরু করে শেষ রাত পর্যন্ত চতুর্থ ধাপে চলতে থাকে মিসকল আদলে বিদ্যুৎ দেয়া নেয়ার পালাক্রমের ভেলকিবাজি। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতায়নকে কলঙ্কিত করতেই বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অজুহাতেই ঘণ্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।
মানুষ যখন প্রকৃতি’র বাতাস বিহীন বিদ্যুতের পাখায় স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে চায় তখনই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় লোডশেডিং। রাত দিন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১০/১৫ বার লোডশেডিং হচ্ছে। তার উপর আবার মিস কল আদলের লোডশেডিং তো রয়েছেই। এদিকে যখন বিদ্যুৎ থাকেনা তখন ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের অফিসিয়াল ল্যান্ড ফোন ব্যস্ত করে রাখা হয়। আবার রিসিভ করলেও দুর্ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ সংকটের ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ভূঞাপুর উপজেলার ছোট-বড় কলকারখানাসহ বিদ্যুৎ নির্ভরশীল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া, অফিসিয়াল কার্যক্রমসহ হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দিনের বেলা ঘণ্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং থাকলেও রাতে একই পরিস্থিতি বিরাজ করে। এতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসের এমন কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরে চললেও এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না।
গোবিন্দাসী বাজারের ব্যবসায়ী বিপ্লব মন্ডল বলেন, দিনের বেলাতে বিদ্যুৎ থাকে না বলে দোকানে কাস্টমার এসে টিকতে পারে না, ফলে বেচাকেনা ঠিক মতো করতে পারি না। আবার রাতে ৪/৫ বার দীর্ঘসময় বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে ছটফট করি। সারারাত ঘুমাতে পারিনা।
কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই গরমের কারণে লেখাপড়া করতে পারি না। তার উপর আবার রমজানের মধ্যে লোডশেডিংয়ের ফাঁদে পড়ে আমাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। লোডশেডিংয়ের কারণে লেখাপড়া ঠিকমতো করতে পারছি না।
নামাজ শেষে এক মুসল্লি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুনেছি রমজান মাসে নাকি আল্লাহ তাআলা সব শয়তানকে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের অবস্থা দেখে মনে হয় এরাই আসল শয়তান। কারণ, প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। এতে রমজানে রোজা রেখে নামাজ আদায় করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
পোল্ট্রি খামারী আব্দুল মালেক বলেন, বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে আমরা খামারীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। খামারে খাবার ও পানি সরবরাহ করতে পারছি না। অত্যাধিক গরমের কারণে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি মুরগি স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে।
গোবিন্দাসী ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ে জন সাধারণ একেবারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের দূর্ভোগ থেকে সাধারণ মানুষ দ্রুত পরিত্রাণ চায়।এ বিষয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ভূঞাপুর উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা যেখানে ২০ থেকে ২১ মেগাওয়াট রয়েছে সেখানে আমরা পাচ্ছি ৮ থেকে ৯ মেগাওয়াট। যার ফলে একেক এলাকায় লোডশেডিং দিয়ে ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছি।