ভূঞাপুরে বাদাম বীজ বপনে ব্যস্ত চরাঞ্চলে কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বাদাম বীজ বপনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলে কৃষকরা।যমুনার চরাঞ্চল থেকে সম্প্রতি বন্যার পানি নেমে যাওযায় চরাঞ্চলে চারদিকে জেগে উঠেছে বালু চর। আর এ অঞ্চলে বর্তমানে কৃষকরা পরিবারের লোকজন নিয়ে বাদাম বীজ বপনে ব্যস্ত সময় পাড় করছে। উপজেলার গাবসারা, রেহাইগাবসারা, রুলীপাড়া, বেলটিয়াপাড়া, জুঙ্গীপুর, সরইপাড়া, বলরামপুর, কুঠিবয়ড়া, বাসুদেবকোল, ভদ্রশিমুল, শুশুয়া, গোবিন্দপুর, নলছিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, রামপুর, কালিপুর ও ডিগ্রিচরসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামের কৃষকরা এলাকায় বাদাম চাষ করছে।যমুনা নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুয় তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পানি নেমে যাওযার সাথে সাথে বাদাম বীজ বপন করতে শুরু করছে।
রেহাইগাবসারা গ্রামের বাদাম চাষি মো. আলম মিয়া বলেন, বিগত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পুরোদমে বাদাম বীজ বপন ও ক্ষেতের পরিচর্যা শুরু করছি। অল্প খরচ, কম সময় বাদাম চাষে অধিক লাভবান হওয়া যায়। বাদাম চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা এবং বিঘা প্রতি ফলন পাওয়া যায় প্রায় ৭ থেকে ৮ মণ। হাট বাজারে বাদামের ভালো চাহিদা থাকায় খরচ বাবদ বিঘা প্রতি লাভ হয় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।তাছাড়া চাহিদা বেশি দামও ভালো।
সরেজমিনে চরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাদাম চাষের জন্য কৃষকরা জমি প্রস্তুত করছে, কেউ বাদামের বীজ বপন করছে, কেউ লাঙল টানছে আবার অনেক চাষিরা বীজ বপণ করা জমি পরিচর্যা করছে। অন্যদিকে, চরাঞ্চলের গ্রামীণ নারীরাও বাদাম চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বাড়ির কাজের পাশা পাশি ছেলেদের সাথে মেয়েরাও সহযোগিতা করছে। কাজ করছে স্কুল পড়–য়া ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও। ভোরের সূর্য না উঠতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষিরা চরাঞ্চলের বালুর মাঠে বাদাম বীজ বপনে ব্যস্ত সময় পাড় করছে।
বাদাম চাষী মোসা: কোহিনুর বেগম বলেন, গত বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে ভালো ফলন এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর প্রায় ৭ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও ভালো ফলন হবে বলে আশা করছি।
বাদাম চাষ বিষয়ে ইবরাহীম খাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষক ও কৃষিবিদ প্রবাস কুমার চন্দ্র বলেন, যমুনা চরাঞ্চলে বাদাম ও অন্যান্য ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই কৃষকরা তাদের বেলে মাটির জমিতে বাদাম চাষ করছেন। আশ্বিন-কার্তিক মাস বাদাম চাষের সঠিক সময়।তাছাড়া আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যে বাদাম কৃষকের ঘরে উঠে। তিনি বলেন,কম খরচে এই ফসল কৃষককে দিচ্ছে প্রচুর অর্থ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এস.এম রাশেদুল হাসান বলেন, ইতোমধ্যে যমুনার চরাঞ্চলে বাদাম চাষ শুরু হয়ে গেছে। অনেক চরগুলোতে বাদামের চারাও গুজিয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাদাম চাষি কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য হতদরিদ্র কৃষক পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের বরাদ্দকৃত প্রণোদনা পেলে দ্রুত সময়ে কৃষকদের মাঝে তা বিতরণ করা হবে। অন্যদিকে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন,সুস্বাদু, মুখোরচক ও ভিটামিন সমৃদ্ধ এই ফসল একদিকে যেমন খাদ্যে যোগান দিয়ে থাকে তেমনি তেলের চাহিদা পূরণ করে। বাদাম ক্ষেত থেকে কচি পাতা কেটে কৃষকরা তাদের গরু ছাগলের খাওয়ান যোগায়। এতে গরু ছাগল তাড়াতাড়ি মোটা তাজা হয়। তাছাড়া অন্য ফসলের মতো বাদামের জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না।
আপনার মতামত লিখুন