বর্ষায় কদর বেড়েছে নৌকার
সৈয়দ সরোয়ার সাদী, ভূঞাপুর:
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও যমুনানদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে ছোটবড় নদ-নদীর পানি। তাই টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা পাড়ের মানুষের নৌকার চাহিদা বেড়েছে। নৌকা তৈরি ও মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এর কারিগররা। সারাদিন পরিশ্রম করে নৌকা তৈরি ও মেরামতের কাজ করছেন তারা। এছাড়া পানিবন্দী যমুনাপাড়ের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন হচ্ছে ছোট-বড় নৌকা। এতে নৌকার হাট-বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও বেড়েছে।ভূঞাপুর উপজেলাটি যমুনানদীঘেসা একটি এলাকা।

এ উপজেলা দিয়ে যমুনা ও ঝিনাই নদী বহমান। বারবার যমুুনা নদী ভাঙনের শিকার হয় উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ টি গ্রাম। আর এ উপজেলার অধিকাংশই চরাঞ্চল হওয়ায় চরে বসবাসকারীদের জীবিকা নির্বাহে একমাত্র সম্বল নদী ও চরের আবাদী ভূমি। নদীতে মাছ ধরে এবং চরে চাষাবাদ ও চর থেকে ঘাস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করে চলে অনেকের সংসার। তাই ঘুম থেকে উঠেই পার হতে হয় দীর্ঘ যমুনা ও এর অন্যান্য শাখা নদীগুলো। এজন্য যমুনার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। তাছাড়া তারাকান্দী যমুনা সার কারখানার ইউরিয়া সারসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত হয় নৌকা।
উপজেলার চর চন্দনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল মোরশেদ জানান, “যমুনানদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয় এমন প্রায় ৩৪ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় শতাধীক শিক্ষক-শিক্ষিকার যাতায়াতের একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। তবে বর্ষা কলে নৌকায় যাতায়াতে সুবিধা হলেও শুকনো মৌসুমে নৌকাতে যাওয়ার পরও কিছুকিছু স্কুলে পায় হেঁটেও যেতে হয়।”
এ কারণেই বর্ষাকালে নৌকার কদর বেড়ে যায়। বর্ষার এক মাস আগে থেকেই পুরোদমে চলে নৌকা তৈরির কাজ। এসব কাজে নিয়োজিত আছে যমুনাপাড়ের কয়েক শত হতদরিদ্র মানুষ।
শনিবার সরেজমিন উপজেলার যমুনানদী সংলগ্ন গোবিন্দাসী হাটে গিয়ে দেখা যায়, রহিম মিয়া নৌকা তৈরির কাজ করছেন। তিনি ১০ বছর ধরে এই পেশায় আছেন। তাদের বাপ দাদারও ছিল একই পেশা।
তিনি আরও জানান, “নৌকা তৈরিতে ব্যবহৃত হয় শাল, কাঠাল ও আম কাঠ। ৭০ ফুট দৈর্ঘ ও ১০ ফুট প্রস্থ একটি নৌকা তৈরি করতে সময় লাগে এক থেকে দেড় মাস। এতে খরচ হয় পাঁচ লাখ টাকা। এ ছাড়া তারা ৫ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকার নৌকাও তৈরি করেন। তারা এসব নৌকা যমুনার তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে বছরের অর্ধেক সময় জীবিকা নির্বাহ করেন।