নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর একটি শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা হিসেবে গত তিন বছর আগেই প্রধানমন্ত্রী এ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে আজ কলুষিত হচ্ছে শতভাগ বিদ্যুতায়ন। ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসের নানা অনিয়মের কারণে গ্রাহকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা। ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নতুন সংযোগ ও ট্রান্সফরমার সংস্কারের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, পুরাতন লাইনের সংস্কার কাজ না করেই মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ এবং নতুন সংযোগের জন্য মিটার প্রতি কিলো অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকারও বেশি নেয়ার অভিযোগ এখন গ্রাহকদের মুখে মুখে। কালিহাতি,ঘাটাইল ও গোপালপুরের কিছু অংশ এ সাবষ্টেশনের আওতাভূক্ত গ্রাহকরা নানা ভোগান্তির স্বীকার । এ সব এলাকায় এখনো বাশের খুটিই দৃশ্যমান।বছরে দুইবার সংস্কারের জন্য খুটি বা তার আসলেও এ সব এলাকায় এখনো একফুট কোভার তার অথবা একটি খুটিও লাগেনি।

এদিকে, নতুন সংযোগের জন্য মিটারসহ ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট দেয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে সর্বনিম্ন ১৮০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা। আর এ টাকা বণ্টন হচ্ছে অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে।এটাই শেষ নয়, কিলো ভেদে বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরির সংযোগ দিতে এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে শিল্প কারখানা, গভীর নলকূপ বা রাইস মিলে থ্রি ফেইজের লাইন নিতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে এর চেয়ে অনেক বেশি টাকা। এছাড়াও সরকারিভাবে নতুন সংযোগের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় নতুন সংযোগ পেতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চর অলোয়া থেকে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যদুরগাতী পর্যন্ত ট্রান্সফর্মারসহ নতুন লাইন নিতে ওই এলাকার গ্রাহকদের গুনতে হয়েছে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিছুদিন আগে নলুয়া থেকে নিকরাইল রশিদের মিল পর্যন্ত ১১টি খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। এ সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ অফিস হাতিয়ে নিয়েছে ৭ লাখ টাকা। এ রকম উপজেলার ফলদা, পাঁচটিকরি, অলোয়া সিংগুরিয়াসহ প্রত্যেক এলাকাতেই নতুন লাইন নিতে লাখ লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। গোবিন্দাসী গ্রামের আবদুল্লাহ মাস্টার বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে ঝামেলায় ছিলাম। এতো টাকা গেলে কি আর করার আছে তারপরও লাইন যে পেয়েছি এটাই সৌভাগ্যর। যদুরগাতী গ্রামের খন্দকার বেলাল হোসেন বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েছি কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকার বিনিময়ে লাইনটি পেয়েছি। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলায় এমন অনিয়ম সত্যিই অবাক করার মতো। প্রতি মাসে লাইন সংস্কার ও গাছ কাটা বাবদ বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও আকাশে মেঘ জমলেই লাইনে সমস্যা দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ।তাছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ফলে গ্রাহকদের টিভি,ফ্রিজ,স্ট্যাবিলাইজার,মটর জ্বলার ঘটনা ঘটছে অবিরত।ূ মিটারের রিডিং এর চেয়ে বিল বেশি করার প্রশ্নে নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক এক মিটার পাঠক বলেন,কর্মকর্তার নির্দেশ ইনপুট বেশি তাই শতকরা ৪০% বেশি বিল করতে হবে।
বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ব্যাংক ড্রাফট ৫০০ টাকা। আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে টাকা বেশি নেয়া হয়। এছাড়াও লাইন নেয়ার জন্য যে মোটা অঙ্কের টাকা লাগে সে বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ টাকা দিয়ে লাইন নেয়ার জন্য এতো অস্থির হয় কেন? আমরা কাউকে টাকা দেয়ার জন্য বলে দেই নাই।অতিরিক্ত বিল করার প্রসংঙ্গে তিনি বলেন,ইনপুট বেশি গরমে রিডিং বেশি আসে তাই অতিরিক্ত বিল করার হয়, দু-্একটিতে বেশি হলে আবেদন করলে ঠিক করে দিবো।খুটি ও তারের বিষয়ে বলেন আগামী প্রজেক্টে সব কাজ করে দেওয়া হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।