আঃ রশিদ তালুকদার : ১ পৌরসভা, ১৪ ইউনিয়ন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসন। রাজনৈতিকভাবে টাঙ্গাইল-৩ আসনটি টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় কারাগারে আছেন। তার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ছড়াছড়ি। এমতাবস্থায় বিএনপির প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদ খানের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত, অপর জন টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কোষাদক্ষ ব্যবসায়ী মোঃ মাইনুল ইসলাম। এ আসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বরাবরই তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হয়। কিন্তু এবার প্রার্থীভেদে হবে প্রতিদ্বন্ধিতা। এখানে আওয়ামী লীগ চারবার ও বিএনপি পাঁচবার এবং জাতীয় পার্টি একবার বিজয়ী হয়েছে
ঘাটাইল থেকে এমপি রানার চাচা প্রখ্যাত রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত শামসুর রহমান খান শাহজাহান ১৯৭০, ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী শওকত আলী ভূঁইয়া।১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী সাইদুর রহমান খান মোহন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুর রহমান খান শাহজাহান পরাজিত হন। আর পর পর চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী লুৎফর রহমান খান আজাদ। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের একাধিক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আজাদ। ২০০৮ সালে শামসুর রহমান খানকে বাদ দিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মতিউর রহমান মতিনকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি জয়লাভ করে আসনটি আবার আওয়ামী লীগের দখলে নেন। সংসদ সদস্য ডা. মতিউর রহমান ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানুর রহমান খান রানা। তিনি বিপুল ভোটে ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমানুর রহমান খান রানা আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন।
এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থানকারী বিশিষ্ঠ শিল্পপতি সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান, ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু, সুপ্রিমকোর্টের ডেপুটি অ্যার্টর্নি জেনারেল ড. শহীদুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের পরিচালক নুরুল আলম তালুকদার, সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত ডা. মতিয়ার রহমানের ছেলে ঢাকা ভিক্টোরিয়া হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান তানভীর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এস আকবর খান, তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও সমৃদ্ধ ঘাটাইল ঢাকার আহ্বায়ক ড. অধীর চন্দ্র সরকার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা একাধিক হওয়ায় ঘাটাইল আওয়ামী লীগে দেখা দিয়েছে কোন্দল। এমপি রানা বিরোধীরা নানান গ্রুপ, উপ-গ্রুপে ভাগ হয়ে গেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম লেবু এবং পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান ভিপি শহীদের মধ্যে অভ্যন্তরীন কোন্দল বেড়েছে । ফলে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন । টাঙ্গাইল-৩ আসনের সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা অর্জনকারী সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিনের সাথে তৃণমূল বেশীর ভাগ নেতা কার্মীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় নির্বাচনী এলাকায় গণ সংযোগ করে যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যানার, বিলবোডর্, সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অনুদানের কার্মক্রম অব্যাহত রেখেছেন। নির্বচনী এলাকার বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা গেছে এ আসনটি তে বর্তমান অবস্থায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অন্যতম নেতা সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন কে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন না দিলে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তৃনমুল আওয়ামী লীগ। তাকে মনোনয়ন দিলে কোন প্রকার দলীয় কোন্দন থাকবেনা বলেও জানা যায়। কাজেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন কে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবী জানিয়েছে তৃনমূল আওয়ামী লীগ।
সৈয়দ আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ তুহিন জানান দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে দলের সার্থে কাজ করব। আমাকে দল মনোনয়ন দিলে আমি জননেত্রী সেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাব। মহান জাতীয় সংসদে এলাকাবাসীর সার্থে যথাযথ উন্নয়নের ভুমিকা উপস্থাপন করব বলে আশাবাদী।